উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার স্কোপজি শহর। নীল আকাশ , সবুজ প্রকৃতি, তবুও বাতাসে একটু উষ্ণতার ছোঁয়া। শহরের একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভার্দার নদী । এই শহরেই জন্মেছিলো আগ্নেস। মিস্টার নিকোলা ও মিসেস ড্র্যানফিলের মেয়ে আগ্নেসের একটি দাদাও ছিল। বাড়িঘর বানানোর কন্ট্রাক্টর মিস্টার নিকোলার আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর পরিবারে হঠাৎ করেই বিপর্যয় নেমে আসে। ছোট্ট মেয়ে আগ্নেসের বয়স তখন মাত্র আট বছর। ছোট দুটি সন্তানকে নিয়ে শুরু হয় একাকী মা মিসেস ড্র্যানফিলের জীবন সংগ্রাম। বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে বড়ো হয়ে উঠতে থাকে আগ্নেস। সাংসারিক অসচ্ছলতার মধ্যেও মিসেস ড্র্যানফিল মাঝেই মাঝেই বাড়ির আসে পাশের আরো অভাবী মানুষগুলোকে খাবার সামগ্রী সরবরাহ করতেন। নিজের মেয়েকে শিখিয়েছিলেন- "একমুঠো খাবারও সবার সাথে ভাগ করে খেতে হয়"।
স্থানীয় কনভেন্ট স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে, মাত্র বারো বছর বয়সে আগ্নেস, লেটনিস শহরে চার্চে আসেন ধর্মীয় শিক্ষা ও ইংরেজি ভাষা শিখবার জন্যে। চার্চের ধর্মীয় জীবনে পড়াশুনা করবার সময়ে ছোট্টো আগ্নেস, মনে মনে ঈশ্বর সেবার প্রতি আরো অনুরক্ত হতে আরম্ভ করে।
১৯২৮ সাল, আগ্নেসের বয়স মাত্র ১৮ বছর। আগ্নেস পৌঁছে যায় আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে সিস্টার্স অফ লরেটো স্কুলে। সে সেখানে নান বা সন্ন্যাসিনীর ব্রত গ্রহণ করে। সেন্ট থেরেসার নামানুসারে তখন তার নাম হয় সিস্টার মেরী থেরেসা। লরেটো ডাবলিন থেকে সেবাকার্যের উদ্দেশ্যে তিনি ভারতবর্ষের দার্জিলিং শহরে এসে পৌঁছোন। সেখান থেকে ১৯৩১ সালে লরেটো সিস্টার্স কলকাতাতে তিনি বদলি হয়ে আসেন। সেবামূলক কাজের পাশাপাশি সেখানে তিনি সেন্ট মারি'স হাই স্কুল ফর গার্লসে শিক্ষকতায় যোগ দেন। কলকাতার অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনা শেখানোর সময়ে তিনি নিজেও বাংলা ও হিন্দি ভাষা শিখে নেন। স্থানীয় ভাষায় পারদর্শী হয়ে ধীরে ধীরে তিনি কলকাতা শহরের দরিদ্র মুমূর্ষু নাগরিকগণের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে আরম্ভ করেন। শহরের বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে ছোটো শিশু, অপুষ্টির শিকার তাদের অল্পবয়সী মা , অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবা করতে থাকেন। অল্প বয়সের বিদেশিনী সন্ন্যাসিনীকে বহু জায়গায় , বহু বাঁধার মুখোমুখিও হতে হয়। ১৯৩৭ সালের ২৪ শে মে, লরেটো সিস্টার্সের সেবা ধর্মের নিয়মানুসারে তাঁর নামকরণ করা হয় মাদার টেরেসা। শিক্ষকতার সাথে সাথে এবং সেবাকার্যের পাশাপাশি তিনি সেন্ট মারিস স্কুলের প্রিন্সিপাল হয়ে ওঠেন ১৯৪৪ সালে। কালীঘাটে এক পরিত্যক্ত কালীমন্দির প্রাঙ্গণে গড়ে তোলেন মৃত্যুপথযাত্রীর সেবা শুশ্রষা কেন্দ্র, নির্মল হৃদয়। অনাথ পথশিশু , দরিদ্র পরিবার, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত রোগী - সমাজের সকল অসহায় মানুষজনের সত্যিকারের মা হয়ে ওঠেন মাদার টেরেসা। ১৯৭১ সালে উনি আমেরিকাতে গড়ে তোলেন হাউস অফ চ্যারিটি। সেখান থেকে ১৯৮২ সালে পৌঁছে যান লেবাননের রাজধানী বৈরুটে। সেখানে পূর্ব ও পশ্চিম বৈরুটের ক্রিস্টান ও মুসলিম উভয় প্রদেশেই পোঁছে যান শিশুদের সেবায়, অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে। ১৯৮৫ সালে নিউ ইয়র্কে এইডস আক্রান্তদের জন্যে গড়ে তোলেন সেবাকেন্দ্র - গিফট অফ লাভ। সারা বিশ্বে ১২৩ টিরও বেশী দেশে ,৪০০০ -এর ও বেশি সেবা কেন্দ্র গড়ে ওঠে ১৯৯৭ সালের মধ্যে। ম্যাসিডোনিয়ার স্কোপজি শহরের ছোট্ট মেয়ে আগ্নেস ,তাঁর সারাজীবনের মানব কল্যাণে উৎসর্গিত সেবাকার্যের মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠলেন, বহু আন্তর্জাতিক ও নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিতা , ভারতরত্ন মাদার টেরেসা। সারা বিশ্ববাসীর কাছে কোলকাতার মাদার টেরেসা।
Information courtesy https://www.missionariesofcharity.org/index.html
By choosing "Accept all cookies" you agree to the use of cookies to help us provide you with a better user experience and to analyse website usage. By clicking "Adjust your preferences" you can choose which cookies to allow. Only the essential cookies are necessary for the proper functioning of our website and cannot be refused
Cookie settings
Our website stores four types of cookies. At any time you can choose which cookies you accept and which you refuse. You can read more about what cookies are and what types of cookies we store in our Cookie Policy.
are necessary for technical reasons. Without them, this website may not function properly.
are necessary for specific functionality on the website. Without them, some features may be disabled.
allow us to analyse website use and to improve the visitor's experience.
allow us to personalise your experience and to send you relevant content and offers, on this website and other websites.